বর্তমান সময়ে ডিজিটাল লেনদেনে সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হলো ডুয়েলে কারেন্সি মাস্টার কার্ড। বিশেষ করে বিদেশ ভ্রমণ আন্তর্যাতিক মার্কেটপ্লেসগুলোতে লেনদেনের জন্য ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড খুব সহজ একটি মাধ্যম। ডুয়েল কারেন্সি কার্ডের মাধ্যমে আপনি একাধিক মূদ্রায় লেনডেন করতে পারবে। যেমন অনেক সময় আমাদের ডলার লেনদেন করার প্রয়োজন হয়ে তখন ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড হতে পারে আপনার জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম।
আজকের পোস্টে, আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচোনা করবো কিভাবে বাংলাদেশ থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড পাবেন এবং ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড ব্যবহারের সুবিধা কী কী।
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড কী?
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড হলো আন্তর্জাতিক মূদ্রা লেনদেনের মাধ্যম আপনার কাছে যদি একটি ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড থাকে তাহলে আপনি ২ টি দেশের মূদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন। ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড সাধারণত ডেভিড এবং ক্রেডিট কার্ড হিসেবেও পাওয়া যায়। ডুয়েল কারেন্সির মাস্টার কার্ড সাধারণত আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য ব্যাবহার করা হয়।
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের সুবিধা
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড ব্যাবহার করলে আপনি অনেক সুযোগ সুবিদা ভোগ করতে পারবেন।যেমন:
- আন্তর্জাতিক লেনদেনে সুবিধা: আপনার কাছে যদি একটি ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড থাকে তাহলে আপনি বিদেশ ভ্রমণ অথবা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে খুব সহজে সেই দেশের মুদ্রার মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড আপনার লেনদেনকে আরও সহজ করে দেবে।
- একাধিক মুদ্রায় লেনদেন: ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে আপনি একটি কার্ডে দুই দেশের মূদ্রা রাখতে পারবেন। দুই দেশেরে মূদ্রায় খুব সহজে লেনদেন করতে পারবেন। সাধারণত একটি মুদ্রা আপনার দেশের এবং অন্যাটি অন্যটি আন্তর্জাতিক যেকোনো দেশের মুদ্রা রাখতে পারবেন।যেমন: ডলার, রুপি, ইউরো ইত্যাদি।
- নিরাপত্তা: প্রযুক্তির উন্নয়নে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের নিরাপত্তা অনেক স্ট্রং হয়েছে। আপনি আপনার ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ডে কঠিন পিন ব্যাবহার করার মাধ্যমে আপনার ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড অনেক নিরাপদ এবং সুরক্ষিত রাখতে পাবেন।
- অতিরিক্ত চার্জ কম: অনেকসময় বিদেশি মুদ্রা ব্যাবহার করার সময় ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ কাটে। তবে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড ব্যাবহারের ফলে চার্জ অনেকটাই কমে যায়।
বাংলাদেশ থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়া
বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড পেতে হলে আপনাকে কিছু পদক্ষেপ অনুসরণ করতে হবে। যেমন:
১. ব্যাংক নির্বাচন
বাংলাদেশ থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড পেতে হলে প্রথমেই আপনাকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড প্রদান করে এম একটি ব্যাংক নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশের অনেক বংক ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড প্রদান করে। তার মধ্যে জনপ্রিয় কিছু ব্যাংক হলো:
- ডাচ বাংলা ব্যাংক
- সিটি ব্যাংক
- এবি ব্যাংক
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
এই ব্যাংকগুলো ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড প্রদানে নির্দিষ্ট কিছু সুবিধা শর্ত এবং ফি এর মাধ্যমে আপনাকে একটি ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড প্রদান করবে। আপনি ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড এর জন্য ব্যাংক নির্বাচনের পূর্বে অশ্যই তাদের শর্ত মাসিক চার্জ ইত্যাদি সম্পর্কে ভালেভাবে জেনে নিবেন।
২. ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া
আপনি যেই ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড নিচে চান সেই ব্যাংকে গিয়ে আপনাকে কিছু ধাপ অতিক্রম করা লাগবে। এই ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের আবেদন প্রক্রিয় সাধারণ কয়েকটি ধাপে বিভক্ত :
- ফর্ম পূরণ: ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের আবেদন করার জন্য প্রথমে আপনি যে ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড নিতে চাচ্ছেন সেই ব্যাংক থেকে একটি রেজিস্ট্রেশন ফরম সংগ্রহ করে নিতে হবে। তারপর সঠিক তথ্য দিয়ে আপনাকে ফরমটি পূরণ করতে হবে।
- ডকুমেন্ট জমা দেওয়া: ফরম পূরন করা সম্পন্ন হয়ে গেলে আপনাকে ফরম সহ ব্যাংক কর্তৃক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
- ফি পরিশোধ: ব্যাংক থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের আবেদন করার সময় আপনাকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ডের জন্য একটি নির্দিষ্ট ফি জমা দিতে হবে। এই ফি সাধারণত ব্যাংকভেদে ভিন্ন হতে পারে।
৩.ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড ইস্যু
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে কার্ড হাতে পাওয়ার জন্য। সাধারণত ব্যাংক ভেদে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড পেতে কম বেশি কিছুদিন অপেক্ষা করতে হয়। হবে সাধারণত আবেদন করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড হাতে পাওয়া যায়। কার্ড ইস্যু হয়ে যাওয়ার পার আপনাকে ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাাখা থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড সংগ্রহ করতে হবে।
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ডের জন্য আবেদনের সময় আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। যেমন:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- পাসপোর্ট (যদি প্রযোজ্য হয়)
- আয়কর রিটার্ন (যদি প্রযোজ্য হয়)
- পাসপের্ট সাইজের ছবি (সাধারণত ১-২ কপি)
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ডের জন্য আবেদন করার সময় আপনি এই ডকুমেন্টগুলো জমা দিলে আপনার তথ্যগুলো ব্যাংক যাচাই বাচাই করে তারা দেখবে সকল তথ্য ঠিক থাকলে আপনি ডুয়েল কারেন্সি হাতে পেয়ে যাবেন।
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের চার্জ ও ফি
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড ব্যাবহারে ফলে ব্যাংক আপনাকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু চার্জ করবে। এই চার্জ সাধারণত ব্যাংক ভেদে ভিন্ন হতে পারে তবে আমরা আপনাকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের ফি সম্পর্কে ধারণ দেওয়ার চেষ্ট করবো :
- বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি: ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড ব্যাবহারের জন্য ব্যাংককে আপনাকে প্রতি বছর কিছু চার্জ দেওয়া লাগতে পারে তাবে তবে ব্যাংক ভেদে এই চার্জের সিস্টেম ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষন ফি ৫০০ থেকে ২৫০০ পর্যন্ত হতে পারে।
- লেনদেন ফি: ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড নিয়মিত ব্যাবহারে জন্য আপনাকে প্রতি লেনদেন করার সময় আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ট্রানজ্যাকশন ফি প্রদান করতে হবে। এই ফি এর পরিমান সাধারণত ১-২% হয়ে থাকে তবে ব্যাংক ভেদে এই নিয়ম ভিন্ন হতে পারে।
- এটিএম ফি: দেশের বাইরের এটি এম বুধ থেকে টাকা উত্তোলন করতে অনেক সময় অতিরিক্ত কিছু চার্জ দেওয়া লাগতে পারে। এই চার্জ বাংলাদেশি টাকায় ৩০০ টাকার আশপাশে হতে পারে।
- চার্জ সহ বিদেশী মুদ্রায় রূপান্তর: আপনার স্থানীয় মূদ্রা অন্য মুদ্রায় রুপান্তর করার জন্য অনেকসময় চার্জ দেয়া লাগতে পারে।
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ডের নিরাপত্তা
ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান প্রযুক্তির কল্যানে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড অনকে সুরক্ষিত। যেমন:
- EMV চিপ প্রযুক্তি: ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড লেনদেনের সময় চিপ প্রযুক্তি ব্যাবহার করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি পিন কোড প্রবেশ করানোর মাধ্যমে আপনার লেনদেনটি নিরাপদ করতে পারেন।
- ফ্রড প্রটেকশন: মাস্টারকার্ডে ফ্রড সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে যা আপনার কার্ড ব্যবহারকারীকে নিরাপদ রাখে।
- OTP (One Time Password): ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড দিয়ে লেনদেন করার সময় OTP কোড ব্যাবহারের ফলে আপনার লেনদেন আরও সুরক্ষিত হবে।
বাংলাদেশ থেকে ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড হাতে পাওয়া বর্তমান অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। আপনি যদি দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে চান অথবা আন্তর্যাতিক মার্কেটপ্লেস থেকে কেনাকাটা করায় অভ্যস্ত থাকেন তাহলে একটি ডুয়েল কারেন্সি মাস্টারকার্ড আপনার জন্য খুবই সুবিধাজনক হতে পারে। একটি ডুয়েল কারেন্সি মাস্টার কার্ড সাধারণত আপনার স্থানীয় মুদ্রার পাশাপাশি আন্তর্যাতিক মুদ্রা লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে থাকে।