রাস্তায় বাইক অথবা ভারী যানবাহন চালানোর জন্য আপনার একটি বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যাতীত আপনি যানবাহন চালালে আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হতে পারে। বর্তমান যুগে দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হয়রানির মধ্যে পড়া লাগে। কিন্তু আপনি যদি সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনি খুব সহজে দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন। আমাদের আজকের পোষ্টটি সম্পুর্ণ পড়লে আপনি খুব সহজেই দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নিতে পারবেন।
১. ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী
বাংলাদেশ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনার কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন :
- ড্রাইভিং লাইসেন্স বয়স সীমা : বাংলাদেশ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা অতিক্রম করতে হবে। যেমন অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জ্য আপনার বয়স নূন্যতম ১৮ হওয়া লাগবে। এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আপনার বয়স নূন্যতম ২১ হতে হবে।
- শারীরিক যোগ্যতা: ড্রাইভিং লাইনসেন্স পেতে হরে আপনাকে শারিরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করেতে হলে আপনার আবেদন এর সময় একটি মেডিকেল ফরম পূরন করতে হবে এবং মেডিকেল ফরমটি কোনো রেজিস্টার ডক্টরের দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে হবে। তাই ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের জন্য আপনার শারিরিকভাবে সুস্থ থাকা জরুরি।
- চালনার দক্ষতা: ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে আপনাকে অনেক ভালোভাবে গাড়ি চালানো শিখে নিতে হবে।
২. দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম
সাঠিক নিয়ম না জেনে দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আপনাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হতে পারে। নিচের ধাপগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করলে আপনি খুব সহজে দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারবেন :
ধাপ ১: রেজিস্ট্রেশন বা আবেদন ফর্ম পূরণ এবং লার্নার গ্রহন
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে প্রথমে আপনাকে BRTA ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি দিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। লার্নার এর নির্দিষ্ট ফি প্রদান করলে আপনি একটি লার্নার কপি পেয়ে যাবেন। আপনার ড্রাইভিং এর লার্নার কপি তে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরিক্ষার তারিখ উল্লেখ থাকবে।
ধাপ ২: লার্নার করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা
ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনের জন্য আপনাকে আপনার কিছু ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে। যেমন:
- জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি
- চিকিৎসক কর্তৃক দেয়া শারীরিক ফিটনেস সার্টিফিকেট
ধাপ ৩: প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ
ড্রাইভিং লাইসেন্সে পেতে হলে আপনাকে আপনার নিকটষ্ট BRTA অফিসে গিয়ে ড্রাইভিং এর পরিক্ষা দিতে হবে এবং ড্রাইভিং পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই আপননি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। তাই অবশ্যই আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে ভালোভাবে ড্রাইভিং এর ওপর প্রশিক্ষন নিয়ে রাখতে হবে।
ধাপ ৪: মেডিকেল পরীক্ষা
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য জন্য আপনার একটি মেডিকেল সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হবে। আপনি আপনার আশপাশের স্থানীয় কোনো হসপিটাল অথবা ক্লিনিক থেকে আপনার চোখ, রক্তচাপ এবং অন্যান্য শারিরিক পরিক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।
ধাপ ৫: ড্রাইভিং পরীক্ষা
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লার্নার গ্রহনের পর লার্নারে উল্লেখিত নির্ধারিত পরিক্ষার তারিখে আপনাকে পরিক্ষা দিয়ে উত্তীর্ন হতে হবে। পরিক্ষা দিয়ে উত্তীর্ন হওয়ার পরে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন অন্যথায় আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন না। পরিক্ষা সাধারণত ৩ ভাবে হয় ১.লিখিত ২.ভাইব ৩.প্রাক্টিকাল। পরিক্ষা সাধারণত খুব বেশি কঠিন হয়না। আপনি খুব সহজেই ড্রাইভিং পরিক্ষায় পাশ করে যেতে পারেন।
ধাপ ৬: ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু
ড্রাইভিং পরিক্ষা দেওয়ার ২-১ দিনের মধ্যে অনলাইনে আপনার ড্রাইভিং পরিক্ষার ফলাফল পেয়ে যাবেন। এবং আপনি ড্রাইভিং পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনলাইনে দেখতে পারবেন। ড্রাইভিং পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আপনাকে ড্রাইভিং লাইন্সের ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদান করার পর আপনি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনলাইন কপি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এবং ২-৩ মাসের মধ্যে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন। আপনার স্থানীয় BRTA অফিস থেকে আপনাকে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহন করতে হবে।
৩. ড্রাইভিং লাইসেন্সের মোট খরচ
আপনি যদি দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করেন তাহলে আপনার খরচ অনেকটা কমে যাবে। দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স করলে আপনার শুধু ড্রাাইভিং লাইসেন্সের সরকারি ফি গুলো পরিশোধ করা লাগবে। নিচেয় দালাল ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি সম্পর্কে আলোচোনা করা হলো:
ড্রাইভিং লাইসেন্স মোট খরচ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার পূর্বে
লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স খরচ (পেশাদার/অপেশাদার)
ড্রাইভিং লাইসেন্স মোট খরচ দক্ষতা যাচাই পরিক্ষার পরে
অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স | পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স |
অপেশাদার (১০ বছর) = ৩০০০/= আবেদন ফি = ৩০০/= ১৫% ভ্যাট = ৬১০/= পোষ্টার সার্ভিস চার্জ = ৬০/= ভ্যাট = ৫৮৭/= | পেশাদার (৫ বছর ) = ১৫০০/= আবেদন ফি = ৩০০/= ১৫% ভ্যাট = ৩১৭/= পোষ্টার সার্ভিস চার্জ = ৬০/= |
সর্বমোট = ৪৫৫৭/= | সর্বমোট = ২,৮৩২/= |
রাস্তায় যানাবহন নিয়ে চলাচল করার জন্য আমাদের সকলের একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা অবশ্যক। তাই আমরা সকলে আমাদের যানবাহন চালানোর পূর্বে ড্রাইভিং লাইসেন্স করে নেবো। ট্রাফিক আইন মেনে চলবো দূর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদে সড়কে চলাচল করবো।